Rafij Khan

Feature Writer And Sub Editor
News Views Media

১৮ বছরের টগবগে এক তরুণের কাছে ঘন অরণ্য, গভীর সমুদ্র কিংবা সীমাহীন আকাশ সবকিছুই রোমাঞ্চকর। কিন্তু এই ঘন অরণ্য, গভীর সমুদ্র বা সীমাহীন আকাশ জয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় কোনটি? এর সবচেয়ে সঠিক উত্তর হয়তো সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান।

সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায়, অন্যদিকে যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে স্থল, জল বা আকাশ পথে দাপিয়ে বেড়ানো যায়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতেদুইভাগে যোগ দেয়া যায়। এক. নন কমিশন্ড অফিসার, দুই. কমিশন্ড অফিসার। এর মধ্যে পদমর্যাদা, সুযোগ সুবিধা ও নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে কমিশন্ড অফিসারেরা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের উপায় কোনটি? এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো এই যে, ISSB বা Inter Services Selection Board এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। তবে সশস্ত্র বাহিনীর একজন কমিশন্ড অফিসার হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে ISSB’র পরীক্ষার আগে ও পরে বেশ কিছু ছোট বড় টাস্কে উত্তীর্ণ হতে হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের জন্য ISSB’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়; Image Courtesy: joinbangladesharmy.army.mil

ISSBর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

ISSB বা Inter Services Selection Board বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের স্বাধীন ও স্বকীয় একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এর শ্লোগান হচ্ছে Selector of the Leaders। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তথা আর্মি, নেভি ও বিমান বাহিনীর জন্য সুদক্ষ ও সেরা অফিসার নির্বাচন করা।

ISSB’র অফিসার নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে একদল সিনিয়র সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা। এই সিনিয়র সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা নানা ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানে ইচ্ছুক বহু প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সেরাদের সেরা নির্বাচিত করে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সকল ক্ষেত্রে ISSB’র নিযুক্ত কর্মকর্তারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে তারা কোনোভাবেই কারও দ্বারা প্রভাবিত হয় না। সম্পূর্ণ নিজ নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে এই কর্মকতারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য কমিশন্ড অফিসার নির্বাচিত করে আসছে।

Inter Services Selection Board; Image Courtesy: issb-bd.org

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত নতুন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনীতে নতুন করে অফিসার নিয়োগের প্রয়োজন হয়। যার ফলশ্রুতিতেই ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ আর্মি ASB বা Army Selection Board প্রতিষ্ঠা করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীও বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমে অফিসার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে থাকে। অতঃপর ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে আর্মি, নেভি ও বিমান বাহিনীর আলাদা আলাদা সিলেকশন বোর্ডগুলোকে একত্রিত করে করে প্রতিষ্ঠা করা হয় ISSB বা Inter Services Selection Board। সেই ১৯৭৬ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সুনাম ও সততার সাথে প্রতিষ্ঠানটি সশস্ত্র বাহিনী তথা আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্সে কমিশন্ড অফিসার নিয়োগ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের জন্য ISSB’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়; Image Courtesy: joinnavy.mil.bd

ISSB’র পরীক্ষার ধাপসমূহ

ISSB বা Inter Services Selection Board এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রতিটি প্রতিযোগীকে একটি সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়। তবে ISSB’র পরীক্ষা পদ্ধতি ধ্রুব নয়, সময়ের সাথে সাথে এর পরীক্ষা পদ্ধতিতে নানা সংযোজন, বিয়োজন হয়। ISSB’র অফিসার নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তারা মূলত প্রতিযোগীর শারীরিক, মানসিক ও পরিবেশগত সক্ষমতার উপরই জোর প্রদান করে। একজন প্রতিযোগীর এই তিন ধরণের সক্ষমতাগুলো বিচারের মাধ্যমে সেই প্রতিযোগীর দক্ষতা, সততা, সূক্ষ্মদৃষ্টি, নিরপেক্ষতা, নেতৃত্বদানের গুণাবলী, প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো গুণগুলো পরখ করে দেখা হয়। আর এই গুণগুলো পরখ করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধাপে নানা ধরনের পরীক্ষা নেয়া হয়।

ISSB’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ধাপসমূহ

ISSB’র পরীক্ষা পদ্ধতি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত নানা পরিবর্তন হয়। তবে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যা বহুদিন যাবত পরীক্ষা পদ্ধতি হিসেবে চলে আসছে।  

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের জন্য ISSB’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়; Image Courtesy: joinairforce.baf.mil.bd

ন্যূনতম যোগ্যতা

সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পূর্ববর্তী যোগ্যতা থাকতে হয়। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে এই ন্যূনতম যোগ্যতায় ভিন্নতা রয়েছে।

সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা (৮৫ তম বিএমএ অনুযায়ী)

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে অবশ্যই অবিবাহিত, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী এবং এস.এস.সি-এইচ.এস.সি পরীক্ষায় সর্বমোট ন্যূনতম ৯.৫ জিপিএ ও বয়সের সময়সীমা ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হতে হবে। পুরুষের শারীরিক উচ্চতা সর্বনিন্ম ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৫৪ কেজি, বুক স্বাভাবিক কমপক্ষে ২৮ ইঞ্চি, বুক প্রসারণ কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি হতে হবে। নারীদের শারীরিক উচ্চতা সর্বনিন্ম ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৪৭ কেজি, বুক স্বাভাবিক কমপক্ষে ২৮ ইঞ্চি, বুক প্রসারণ কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি হতে হবে। এছাড়াও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা থাকা যাবে না।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের সার্কুলার; Image Courtesy: joinbangladesharmy.army.mil

নৌবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা (২০২১ A অনুযায়ী)

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে অবশ্যই অবিবাহিত, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী এবং এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪.৫ জিপিএ ও বয়সের সময়সীমা ১৬.৫ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হতে হবে। পুরুষের শারীরিক উচ্চতা সর্বনিন্ম ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি, বুক স্বাভাবিক কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি, বুক প্রসারণ কমপক্ষে ৩২ ইঞ্চি হতে হবে। নারীদের শারীরিক উচ্চতা সর্বনিন্ম ৫ ফুট ১ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৪৬ কেজি, বুক স্বাভাবিক কমপক্ষে ২৮ ইঞ্চি, বুক প্রসারণ কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি হতে হবে। এছাড়াও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা থাকা যাবে না।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের সার্কুলার; Image Courtesy: joinnavy.mil.bd

বিমান বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা (৮২ বাফা অনুযায়ী)

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে অবশ্যই অবিবাহিত, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী এবং এস.এস.সি-এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪.৫ জিপিএ ও বয়সের সময়সীমা ১৬.৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হবে। পুরুষের শারীরিক উচ্চতা সর্বনিন্ম ৬৪ ইঞ্চি, ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী, বুক স্বাভাবিক কমপক্ষে ৩২ ইঞ্চি, বুক প্রসারণ কমপক্ষে ৩৪ ইঞ্চি হতে হবে। নারীদের শারীরিক উচ্চতা সর্বনিন্ম ৬২ ইঞ্চি, ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী, বুক স্বাভাবিক কমপক্ষে ২৮ ইঞ্চি, বুক প্রসারণ কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি হতে হবে। এছাড়াও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা থাকা যাবে না।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের সার্কুলার; Image Courtesy: joinbangladesharmy.army.mil

প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

সার্কুলার অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের ন্যূনতম যোগ্যতা পূরণ হলে একজন প্রতিযোগী সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারের জন্য আবেদন করতে পারে। আর্মি, নেভি বা বিমান বাহিনীর মধ্যে যে বাহিনীতে সে যোগদানে ইচ্ছুক সেই বাহিনীর তৎকালীন সার্কুলার অনুযায়ী সে আবেদন করতে পারবে। যথাযথভাবে আবেদন করার পর মূলত একটি নির্ধারিত দিনে তার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবেদনে উল্লেখ করা স্থানে হাজির হতে হবে।

উক্ত স্থানে হাজির হওয়ার পর প্রার্থীর সশস্ত্র বাহিনীর একজন ডাক্তার কর্তৃক প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। উক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রার্থীর শারীরিক উচ্চতা, ওজন, নাক, কান, গলা, চোখ, মুখ, দাত, বুক, বর্ণান্ধতা, ভেইকল ভেইন ইত্যাদি নানা ধরণের প্রাথমিক পরীক্ষা করা হবে। উক্ত সকল পরীক্ষায় প্রার্থী যদি উত্তীর্ণ হয় তবে তাকে পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হবে। 

সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার নির্বাচনের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা; Image Courtesy: sarkariarmyjob.com

প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষা

প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর একজন চৌকস অফিসার খুব অল্প সময়ে প্রার্থীকে পরখ করে দেখবেন। এই প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষাকে সশস্ত্র বাহিনীর এক বা একাধিক চৌকস অফিসারের সাথে প্রার্থীর সাধারণ কথোপকথনও বলা যেতে পারে। এই ধাপে অফিসার খুব সহজভাবে প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানতে চাইবেন। এছাড়াও প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক পরিচয়, পছন্দ-অপছন্দ, সাধারণ জ্ঞান, ভাষাগত ও যোগাযোগ দক্ষতা, সশস্ত্র বাহিনীতে কেন যোগ দিতে চায় ইত্যাদি জানতে চাইবেন। এই সকল কথার মাঝেই অফিসার প্রার্থীর আচার আচরণ, চাল-চলন, কথা বার্তা, রুচিবোধ, তাৎক্ষণিক বিচক্ষণতা, সততা ইত্যাদি গুণগুলো পরখ করে দেখার চেষ্টা করবেন। অতঃপর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সাথে অফিসার সিদ্ধান্ত নিবেন যে উক্ত প্রার্থীকে পরীক্ষার পরবর্তী ধাপের জন্য নির্বাচিত করা যায় কি-না। যদি অফিসার উক্ত প্রার্থীকে পরবর্তী ধাপের জন্য নির্বাচিত করেন, তাহলে সে পরবর্তী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। অন্যথায় সে এই পর্যায়েই সশস্ত্র বাহিনীতে যোগাদানের অনুত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে। 

সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার নির্বাচনের প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষা; Image Courtesy: YouTube.

লিখিত পরীক্ষা

প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সকল প্রার্থীকে বেশ কিছুদিন সময় দেয়া হয়। অতঃপর পূর্বে উল্লেখিত দিনে সকল প্রার্থীর একসাথে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর লিখিত পরীক্ষায় ভিন্নতা থাকে। এমনকি সময়ের সাথে সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের ধরনও পরিবর্তন হয়। তবে সকল বাহিনীতেই পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধু পুঁথিগত বিদ্যার উপর ভর না করে প্রার্থীর যাচাই বাছাই ক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও সাধারণ জ্ঞানের উপর জোর দেয়া হয়।

সেনাবাহিনীতে লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের কমন কিছু প্রশ্নের পরীক্ষা নেয়া হয়। নৌবাহিনীতে লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে IQ, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞানের উপর লিখিত পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত লিখিত পরীক্ষার ফলাফল কয়েকদিন পরে দেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ISSB’র পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়।

সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার নির্বাচনের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়; Image Courtesy: metro.co

ISSB’র পরীক্ষাসমূহ

প্রাথমিক স্বাস্থ্য, মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর একজন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ISSB’র পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ পায়। ISSB’র পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়ার আগে একজন প্রার্থী বেশ কিছু দিন তার মানসিক, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য সময় পায়। একইসাথে প্রার্থীকে অনলাইনে ব্যাক্তিগত তথ্য সম্বলিত একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। ফর্ম পূরণ করার পর পূর্বে উল্লেখিত সময় অনুযায়ী প্রার্থীকে ঢাকা সেনানিবাসের ISSB এউপস্থিতহতেহয়।ISSB’র পরীক্ষা মূলত একটি সিরিজ পরীক্ষা। টানা ৪ দিন একটির পর আরেকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম দিন (সকাল)

সঠিক সময়ে উপস্থিত

সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা খুব কঠোরভাবে মানা হয়। ISSB’র পরীক্ষা যেহেতু সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের পরীক্ষা, তাই এখানেও সময়ানুবর্তিতার প্রমাণ দিতে হয়। ISSB’র নির্দেশনা মোতাবেক ঠিক সকাল ৭.৩০ এর মধ্যে সেখানে উপস্থিত হতে হয়। কোনো কারণে যদি প্রার্থী সকাল ৭.৩০ এর মধ্যে উপস্থিত না হতে পারে তবে সে আর সেই বোর্ডে ISSB’র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। 

স্বাগত পরিচিতি

ISSBতে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রথম দিন সকালে প্রথমে সকল প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে স্বাগত ভাষণ দেয়া হয়। উক্ত ভাষণে সকল প্রার্থীদেরকে আগামী ৪ দিনের অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়। একইসাথে আগামী ৪ দিন সকলকে যে সকল আইন কানুন মেনে চলতে হবে তা সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয়। সকল প্রার্থীকে আলাদাভাবে সনাক্তকরণের জন্য আলাদা করে চেস্ট নম্বর দেয়া হয়। 

ISSB এ সকলকে আলাদা করে সনাক্তকরণের জন্য থাকে স্বকীয় চেস্ট নম্বর; Image Courtesy: twitter.com

IQ টেস্ট

ISSBর প্রথম পরীক্ষা হচ্ছে Intelegence Test বা IQ টেস্ট। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর মেধাগত পরিচয় যাচাই বাছাই করা হয়। এই টেস্ট মূলত ২ ভাগে সম্পন্ন হয়। প্রথম ভাবে Progressive Matrix Test অনুষ্ঠিত হয় যাতে একজন প্রার্থীকে বেশ কয়েকটি ডায়াগ্রাম আকারের Matrix সমাধান করতে হয়। IQ Test এর দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে Verbal Intelligence Test। এই ধাপে প্রার্থীকে ভাষাগত নানা সমস্যা সমাধান করতে হয়।

পরীক্ষাটি পুরোটাই কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে। তাই কম্পিউটারে সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রয়েছে এমন প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকবে। IQ টেস্টে ভালো ফলাফলের জন্য অনলাইনে অথবা নানা IQ বইয়ের মাধ্যমে আগে থেকেই প্রচুর পরিমান অনুশীলন করতে হয়। IQ টেস্টের রেজাল্টে যারা পাশ করবে তারা পরবর্তী ধাপ বা PPDT এর জন্য মনোনীত হবে।

ISSB’র প্রথম দিন সকালে হয় IQ টেস্ট; Image Courtesy: issb-bd.org

PPDT টেস্ট

ISSBর প্রথম দিনের দ্বিতীয় পরীক্ষাটির নাম PPDT বা Picture Perception And Discussion Test। এই পরীক্ষাটি Writing এবং Discussion এই দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমে সকল প্রার্থীকে একটি বড় হল রুমে নিয়ে যেয়ে ৩০ সেকেন্ডের জন্য একটি অস্পষ্ট বা এলোমেলো ছবি দেখানো হবে। এই ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই প্রার্থীদেরকে সেই অস্পষ্ট ছবি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারনা নিতে হবে। পরবর্তীতে ৩০ সেকেন্ড শেষ হওয়ার পর এই ছবি সম্পর্কে প্রায় ৫ মিনিট সময়ের মধ্যে লিখতে হবে। PPDTএর দ্বিতীয় ভাগে অস্পষ্ট ছবিটির বিষয়ে গ্রুপ আলোচনা করতে হবে। গ্রুপে আলোচনার সময় ছবিটি সম্পর্কে নিজ মতামত এবং মতামতের পেছনে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হবে। এই টেস্টে মূলত কোনো এক নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রার্থীর চিন্তা করার, লেখার ও উপস্থিত বক্তৃতা দেয়ার দক্ষতা যাচাই করা হয়।

ISSB’র প্রথম দিন সকালে হয় PPDT টেস্ট; Image Courtesy: issb-bd.org

স্ক্রিনড আউটের ফলাফল ঘোষণা

PPDT টেস্টের পর নতুন করে ফলাফল প্রকাশিত হয়। যারা PPDT পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছে তারা ISSB এর পরীক্ষা থেকে বাদ পরে যায় এবং আগামী তিন দিনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ হারায়। একে Screened Out বলা হয়। যারা Screened Out হয়, তারা ভবিষ্যতে আর মাত্র একবার ISSB পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। অন্যদিকে যারা IQ এবং PPDT উভয় পরীক্ষায় পাশ করেছে তারা আগামী পরীক্ষাগুলো অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

PPDT পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণরা স্ক্রিনড আউট হয়; Image Courtesy: issb-bd.org

প্রথম দিন(বিকেল)

যারা PPDT তে উত্তীর্ণ হয়েছে তারা বিকেলের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। অন্যদিকে যারা PPDT তেঅনুত্তীর্ণ হয়েছে তাদের ISSB ছেড়ে চলে যেতে হয়।

পারসোনালিটি টেস্ট

পারসোনালিটিটেস্টের মাধ্যমে প্রত্যেক প্রতিযোগীর পারসোনালিটির প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করা হয়। এই টেস্টের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থীদের জন্য চারটি ছবি প্রদর্শিত করা হয় এবং সেই ছবিটিকে দেখে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্প লিখতে হয়। পারসোনালিটি টেস্টের দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি গল্পের প্রথম লাইন দেয়া থাকে এবং নিজের ইচ্ছেমত ঐ গল্পকে সাজিয়ে লিখতে হয়। পারসোনালিটি টেস্টের তৃতীয় পর্যায়ে সর্বমোট ৮০ টি শব্দ দেয়া থাকে এবং সেইসব শব্দ দিয়ে নিজের ইচ্ছেমত সঠিক ও যুক্তিযুক্ত ৮০ টি বাক্য রচনা করতে হয়।

পারসোনালিটি টেস্টের চতুর্থ পর্যায়ে বেশ কিছু অসম্পূর্ণ বাক্য দেয়া থাকবে, তা থেকে পূর্ণাঙ্গ বাক্য রচনা করতে হবে। পারসোনালিটি টেস্টের পঞ্চম পর্যায়ে সকল প্রার্থী তার নিজের সম্পর্কে নানা দৃষ্টিভঙ্গির আদলে ব্যাখ্যা করবে। এইসকল টেস্ট ছাড়াও সকল প্রার্থীকে নিজের জীবনে যেকোনো স্মরণীয় অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বাংলা ও ইংরেজিতে দুইটি আলাদা রচনা লিখতে হবে। এছাড়াও সর্বশেষে প্রার্থীকে নিজের জীবন সম্বলিত একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। পারসোনালিটি টেস্টে সঠিক বা ভুল উত্তর বলে কিছু নেই। প্রতিটি প্রার্থী তার কল্পনাশক্তি, যুক্তি, বিবেক ও লেখার দক্ষতা দিতে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে।   

পারসোনালিটি টেস্টে প্রতিযোগীর পারসোনালিটির প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করা হয়; Image Courtesy: nbcnews.com

দ্বিতীয় দিন

ISSB’র পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন একজন প্রার্থীকে ছোটবড় মিলিয়ে মোট ৬ টি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে সকালে Group Testing Ground এ একজন Group Testing অফিসারের তত্ত্বাবধানেশারীরিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য নানা ধরণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। দ্বিতীয় দিন সকালে GTO সংক্ষেপে Group Testing Ground প্রতিটি পরীক্ষার নানা আইন কানুন বিধি নিষেধ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে প্রার্থীদেরকে বুঝিয়ে দেন। এরপর পর্যায়ক্রমে Group Discussion, Progressive Group Task বা PGTHalf Group Task, Extempore Speech, Physical Ability Test ও দিনের সর্বশেষ ভাগে Interview দিতে হয়।

Group Discussion (বাংলা ও ইংরেজি)

Group Testing Groundএর প্রথম ধাপ হচ্ছে Group Discussion। এই ধাপে বাংলা ও ইংরেজি এই দুই ধাপে Group Discussion অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত Group Discussion এর বিষয়াবলি মূলত সমসাময়িক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী হয়ে থাকে। সাধারণত প্রতিটি আলোচনা ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মত হয়ে থাকে। সকল প্রার্থীদের এই আলোচনার অংশগ্রহণ করতে হয় এবং একে অপরের সাথে উল্লেখিত ঐ বিষয়ে নিজের চিন্তা ধারাও যুক্তি তুলে ধরে। যেকোনো প্রার্থী অন্য প্রার্থী চিন্তা, যুক্তি বা উপদেশের পক্ষে ও বিপক্ষে নিজের মনোভাব তুলে ধরতে পারে।

২০ থেকে ২৫ মিনিট ধরে সমসাময়িক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ীGroup Discussion অনুষ্ঠিত হয়; Image Courtesy: cit-asl.org

PGT বা Progrressive Group Task

PGT হচ্ছে Group Testing Ground এর দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে গ্রুপের একে অপরের সহযোগিতায় ছেলেদের ৪ টি ও মেয়েদের ৩ টি ধাপ পারি দিয়ে একটি টাস্ক পূরণ করতে হয়। টাস্ক শুরুর আগে GTO ঐ টাস্ক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা দেবেন। এই ধাপে নির্দিষ্ট টাস্কটি পূরণের জন্য ভারী ড্রাম, দড়ি, প্ল্যাঙ্ক ও দরকারি কিছু সরঞ্জাম দেয়া হবে। সর্বমোট ৪০ মিনিটের মধ্যে একটি দলগত প্রচেষ্টায় উক্ত টাস্কটি যথাসম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। 

HGT বা Half Group Task

HGT হচ্ছে Group Testing Ground এর তৃতীয় ধাপ। এটা অনেকটা PGT এর মতই। কিন্তু এই ধাপে একটি মাত্র ধাপে টাস্কটি পূরণ করতে হয় এবং এই টাস্ক পূরণের ক্ষেত্রে PGT অপেক্ষা কম সদস্যর দল নির্বাচন করা হয়।

Progrressive Group Task এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

Extempore Speech

Half Group Task এর পর প্রার্থীকে খুব দ্রুত Extempore Speech দেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এই ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীকে দৈবভাবে একটি বক্স থেকে যেকোনো দুটি চিরকুট তুলতে হয় যাতে যেকোনো ২ টি বিষয় সম্পর্কে বলা থাকে। প্রার্থীকে তার পছন্দ অনুযায়ী ঐ দুইটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটি বিষয়ে তার গ্রুপের সামনে Extempore Speech দিতে হয়। Speech দেয়ার আগেতিন মিনিট প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য দেয়া হয় এবং Speech তিন মিনিট সময় ধরে দিতে হয়। 

Extempore Speech এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

PAT বা Physical Ability Test

PAT এ সাধারণত একজন প্রার্থীর শারীরিক ভারসাম্য, সক্ষমতা, সাহসিকতা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। এই ধাপে ছেলেদের তিন মিনিট ৩০ সেকেন্ডে ও মেয়েদের ৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে একজন প্রার্থীকে মোট ৭ টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সর্বপ্রথম ৩০ সেকেন্ডে ১০ টি সিট আপ দিতে হয় যাতে মোট নম্বর ১০। এছাড়াও চিন আপে ৬ নম্বর, লং জাম্পে ৫ নম্বর, বার্মা ব্রিজে এক মিনিট ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডে অতিক্রমে ৫ নম্বর, Ladder Crossing এ ১০ নম্বর, Zig Zag Crossing এ ৪ নম্বর, Shuttle Run এ ১০ নম্বর রয়েছে। কোন প্রার্থী যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই ৭টি ধাপ সম্পন্ন করতে পারে তবে তার জন্য থাকে বোনাস নম্বর।

Physical Ability Test এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

Interview

PAT শেষ করে ডরমেটরিতে যাওয়ার পর Deputy President এর কাছে Interview এর জন্য যেতে হয়। একে সংক্ষেপে DP Viva ও বলা হয়। এই DP Viva তে মূলত Deputy President প্রার্থীর নানা দিক বিবেচনায় সে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের জন্যযোগ্য কিনা সেটি বাছাই করে। ভাইবাতে DP মূলত প্রার্থীর নিজ, পরিবার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা, পছন্দ অপছন্দ, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, অর্জন, দুর্বলতা, সক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চায়। এই ভাইভার জন্য আলাদা করে কোন প্রশিক্ষণের দরকার নেই। ভাইভায় একজন প্রার্থী বাস্তবিক অর্থেই যেমন, ঠিক তেমনি খোলামেলাভাবে নিজেকে তুলে ধরাটাই সমীচীন।

DP Viva এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

তৃতীয় দিন

Planning Exercise (Written And Discussion)

Planning Exercise
 হচ্ছে Group Testing Ground এর ধাপ। এই ধাপ ২টি ভাগে সম্পন্ন হয়। প্রথম ভাগে অর্থাৎ লিখিত ভাগে প্রার্থীকে গল্পাকারে শর্তসাপেক্ষে কিছু সমস্যা দেয়া হবে। প্রার্থী তার নিজের বিচার বুদ্ধি ও জ্ঞানের আলোকে সেই সমস্যার সমাধান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লিখিত আকারে জমা দিবে। Planning Exercise এর দ্বিতীয় ধাপে দলগতভাবে একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং সেই সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় এবং সেই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কে কী দায়িত্ব পালন করবে সেটিও ঠিক করতে হয়। একইসাথে সকলে মিলে এই এই টাস্ক পূরণের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্য থেকে একজন দলনেতা নির্বাচন করতে হয়। 

Planning Exercise এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

Command Task

Planning Exercise ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর Command Task এর জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এই ধাপ শুরু হওয়ার আগে GTO পুরো দলের কাছেএই ধাপের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে তুলে ধরেন। এই ধাপে সকলে একে একে করে দলনেতা হওয়ার সুযোগ পায় এবং তার নির্দেশ অনুযায়ী দলের বাকি সবাই কাজ করে থাকে। দলনেতা হিসেবে নির্দেশনা দেয়ার সময় তার ইতিবাচক বা নেতিবাচক সকল সিদ্ধান্তই দলনেতার উপরে বর্তায়।  

Mutual Assessment

Command টাস্ক শেষ হওয়ার পর গ্রুপের সবাই একে অপরের সম্পর্কে নিজ মতামত দেয়। এই ধাপকে বলা হয় Mutual Assesment। এটি Ground Task এর সর্বশেষ পর্যায়। এই ধাপে প্রত্যেকে গোপনীয়ভাবে একে অপরের এমনকি নিজেরও মূল্যায়ন করে থাকে। এই ধাপ শেষে GTO গ্রুপের সবাইকে ডেকে দলগতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের সঠিক ও ভুল সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন।

Command Task এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

Group Testing Ground এ ভালো করার জন্য প্রথমত একজন প্রার্থীকে মূলত মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়। দ্বিতীয়ত গ্রুপে কাজ করার সময় নিজের কৌতূহল, উৎসাহ ও উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হয়। এছাড়াও সকল ক্ষেত্রে GTO এর নির্দেশনা মেনে চলতে হয় এবং নিজ কাজের মাধ্যমে গ্রুপে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হয়। 

চতুর্থ দিন

ISSB’র চতুর্থ দিন হচ্ছে সর্বশেষ দিন। এই দিনে সাধারণত পরীক্ষার কোন চাপ থাকে না।

Assesment Conference

Assesment Conference ধাপে সাধারণত GTO, DP এর সাথে President এর বৈঠক হয়। এই বৈঠকে সকল প্রার্থীদের গত তিন দিনের পারফর্মেন্স বোর্ড কনফারেন্সে তুলে ধরা হয়। সকল প্রার্থীদের নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা হয় এবং তাদের সকল পারফর্মেন্সকে স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করা হয়। অতঃপর সকলে মিলে সেরাদের মধ্যে সেরাদের নির্বাচিত করে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না সকলে একমতে পৌছায়।

Assesment Conference এর একাংশ; Image Courtesy: issb-bd.org

Final Result And Final Briefing

স্বপ্নের গ্রিন কার্ড, আশার ইয়োলো কার্ড ও হতাশার রেড কার্ড

ISSB 
এ প্রত্যেক প্রার্থীকে চার দিনের গভীর মূল্যায়নের পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। মোট তিন ধরনের ফলাফল দেয়া হয়। যারা ISSB কর্তৃক চূড়ান্তভাবে সশস্ত্র বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়েছে তাদেরকে দেয়া হয় বহু আকাঙ্খিত স্বপ্নের গ্রিন কার্ড। যারা ISSB কর্তৃক নির্বাচিত কিন্তু আরও শারীরিক সক্ষমতা দরকার তাদেরকে দেয়া হয় আশার ইয়োলো কার্ড। ইয়োলো কার্ড প্রাপ্তদের ISSB কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয় তাদের শারীরিক উন্নতির জন্য।

যদি ইয়োলো কার্ডধারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার শারীরিক সক্ষমতা বা জটিলতা ঠিক করতে পারে তবে তাকে পরবর্তীতে গ্রিন কার্ড দেয়া হয়। অন্যদিকে যারা ৪ দিনের কঠিন পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতার যথাযথ প্রমাণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের দেয়া হয় রেড কার্ড। রেড কার্ড পাওয়া মানে ISSB কর্তৃক অসুপারিশকৃত। তবে যারা রেড কার্ড পাবে তারা ৬ মাস পর পুনরায় পূর্ববর্তী সকল ধাপ অতিক্রম করে ISSB’র পরীক্ষায় সর্বশেষ আরেকবার অংশগ্রহণ করতে পারবে।

চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে দেয়া হয় লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের কার্ড; Image Courtesy: issb-bd.org

চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও অফিশিয়াল জয়েনিং লেটার

ISSB কর্তৃক সুপারিশকৃত প্রার্থীদেরকে নিজ নিজ বাহিনীতে সদর দপ্তরে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যেতে হয়। উক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাশ করলে প্রার্থীকে কিছুদিনের মধ্যেই অফিশিয়াল জয়েনিং লেটার পাঠানো হয়।

প্রশিক্ষণ

অফিশিয়াল জয়েনিং লেটার পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচিত প্রার্থী সশস্ত্র বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে চলে যায়। সেখানে ৬ মাস এবং নিজ নিজ বাহিনীর একাডেমীতে বাকি সময়সহ মোট চার বছরের প্রশিক্ষণ শেষে অফিসিয়ালি সে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরই মাধ্যমে শুরু হয় দেশ মাতৃকার জন্য নিজের জীবনকে বাজি ধরার পালা।

Feature Image Courtesy: issb-bd.org

Share to spread the knowledge

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *